ফল পুনঃনিরীক্ষণে ক্ষেত্রে একই এসএমএস-এর মাধ্যমে একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে। সে ক্ষেত্রে কমা (,) দিয়ে বিষয় কোড আলাদা লিখতে হবে।

কক্সবাজার জেলায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। গেল বছর (২০২২ সালে) যেখানে পাসের হার ছিল ৮৮.৪৫% এ বছর সেখানে ৭৭.২৫%। গত বছর জিপিএ-৫ প্রাপ্তি ছিল যেখানে ২৪৫১ জন সেখানে এবছর পেয়েছে মাত্র ১৪০৬ জন। এক লাফে পাসের হার কমেছে ১১.২০% এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তি কমেছে ১০৪৫ জন! তিন বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ফলাফল হয়েছে বিজ্ঞান বিভাগে। পাশের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে এবারও ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। উদ্বেগের বিষয় এবছর মেয়েদের চেয়ে ২০৪৫ জন ছেলে কম পাশ করেছে। এমনই বিপর্যয়কর চমকে দেওয়া ফলাফল হয়েছে এবার কক্সবাজার জেলায়। তবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কক্সবাজার জেলায় সবচেয়ে ভালো ফলাফল করেছে কক্সবাজার সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় এবং কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় এবং বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির শিক্ষার্থীরা। গত ২৮ জুলাই শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে সারা দেশের ন্যায় কক্সবাজার জেলাতেও মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা ২০২৩ এর ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এবছর এসএসসিতে কক্সবাজার জেলায় মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ২৩ হাজার ৪৫৪ জন। তাদের মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে ২৩ হাজার ২১০ জন। আর পাশ করেছে ১৭ হাজার ৯২৯ জন। পাশের হার ৭৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪০৬ জন। এবারের পরীক্ষায় ছেলে পরীক্ষার্থী ছিলো ১০ হাজার ৪২১ জন এবং অংশ নেয় ১০ হাজার ৩৪০ জন।

এর মধ্যে পাশ করেছে ৭ হাজার ৯৪২ জন ।পাশের হার ৭৬.৮১%। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৪৬ জন। অন্য দিকে এবারের পরীক্ষায় মেয়ে পরীক্ষার্থী ছিলো ১৩ হাজার ৩৩ জন এবং অংশ নেয় ১২ হাজার ৮৭০ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ৯ হাজার ৯৮৭ জন এবং পাশের হার ৭৭.৬০%। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৬০ জন। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২ হাজার ৪৫১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ১০৮২ জন আর ছাত্রী ১৩৬৯ জন। গত বছরের তুলনায় এবছর ১০৪৫ জন কম পেয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগ পরিসংখ্যানে দেখা যায়,কক্সবাজার জেলায় প্রতিবারের মতো ২০২৩ সালেও পাশের হার সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞান বিভাগে। এবছর বিজ্ঞানে মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ৪৬৩০ জন এবং অংশগ্রহন করে ৪ হাজার ৬১৫ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ৪ হাজার ৩৪৬ জন। পাশের হার ৯৪,১৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ২৫৬ জন। গত বছর(২০২২) পাশের হার ছিল ৯৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ হাজার ৯৬৬ জন।এ বছর বিজ্ঞানে মোট ছেলে পরীক্ষার্থী ছিলো ২২২৯ জন এবং অংশগ্রহন করে ২ হাজার ২২২ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ২ হাজার ৮৩ জন। পাশের হার ৯৩,৭৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৯৮ জন। গতবছর পাশের হার ছিল ৯৮.০২% এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯৩০ জন। অন্য দিকে এ বিভাগে মোট মেয়ে পরীক্ষার্থী ছিলো ২৪০১ জন এবং অংশগ্রহন করে ২ হাজার ৩৯৩ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ২ হাজার ২৬৩ জন। পাশের হার ৯৪.৫৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৫৮ জন। গতবছর পাশের হার ছিল ৯৭.৭১% । আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ হাজার ৩৬ জন।

বাণিজ্য বিভাগ এবছর বাণিজ্য বিভাগে মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ৬৬৬২ জন এবং অংশগ্রহন করে ৬ হাজার ৬০৯ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ৫ হাজার ৫৮১ জন। পাশের হার ৮৪,৪৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১৬ জন। গত বছর (২০২২) পাশের হার ছিল ৯২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩৫২ জন। এ বছর বাণিজ্যে মোট ছেলে পরীক্ষার্থী ছিলো ৩৬৫১ জন এবং অংশগ্রহন করে ৩ হাজার ৬৩১ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ৩ হাজার ৫ জন।পাশের হার ৮২,৭৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৪৫ জন। গতবছর পাশের হার ছিল ৯১.৬৭% এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৩০ জন। অন্যদিকে এ বিভাগে মোট মেয়ে পরীক্ষার্থী ছিলো ৩০১১ জন এবং অংশগ্রহন করে ২ হাজার ৯৭৮ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ২ হাজার ৫৭৬ জন। পাশের হার ৮৬.৫০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৭১ জন।গতবছর পাশের হার ছিল ৯৩.৩৩% । আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২২২ জন। মানবিক বিভাগ এবছর মানবিক বিভাগে মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ১২,১৬২ জন এবং অংশগ্রহন করে ১১ হাজার ৯৮৬ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ৮ হাজার ২ জন। পাশের হার ৬৬.৭৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৩৪ জন। গত বছর (২০২২) পাশের হার ছিল ৮১.১৬ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল মাত্র ১৩৩ জন। এ বছর মানবিকে মোট ছেলে পরীক্ষার্থী ছিলো ৪,৫৪১ জন এবং অংশগ্রহন করে ৪ হাজার ৪৮৭ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ২ হাজার ৮৫৪ জন।পাশের হার ৬৩.৬১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৩ জন। গতবছর পাশের হার ছিল ৯১.৬৭% এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২২ জন।

অন্য দিকে এ বিভাগে মোট মেয়ে পরীক্ষার্থী ছিলো ৭,৬২১ জন এবং অংশগ্রহন করে ৭ হাজার ৪৯৯ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ৫ হাজার ১৪৮ জন। পাশের হার ৬৮.৬৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৩১ জন। গতবছর পাশের হার ছিল ৮৩.৫৫% । আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১১১ জন। চট্রগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে শীর্ষ ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কক্সবাজারের তিন স্কুল এছাড়া চট্রগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে শীর্ষ ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঠাই করে নিয়েছে বরাবরের মতো ভালো ফলাফল অর্জন করা কক্সবাজার শহরের দুটি প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়। আর তালিকায় এবছর নতুন যুক্ত হয়েছে বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি। কক্সবাজার সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাম মোহন সেন কক্সবাংলাকে জানান, এবছর ২৪৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তির্ন হয়েছে ২৩৭ জন। ফেল করেছে ৭ জন। পাশের হার ৯৭.১৩ %।জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫৭ জন। গতবছর (২০২২) পাশের হার ছিল ৯৯.৬১% এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৯০ জন। কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মাসুদা মোর্শেদ আইভি জানান,এবছর ২৪৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তির্ন হয়েছে ২৪৩ জন। ফেল করেছে ৪ জন। পাশের হার ৯৮.৩৮ %।জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৭৯ জন। গতবছর (২০২২) পাশের হার ছিল ৯৯.৭০% এবং ২০১টি জিপিএ-৫ পেয়ে জেলায় শীর্ষে ছিল এ প্রতিষ্ঠান। অপরদিকে জেলায় সাফল্য লাভ করা বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির ৫৪৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তির্ন হয়েছে ৫৩৬ জন।

ফেল করেছে ৭ জন। পাশের হার ৯৮.৭১ %। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৩ জন। গত শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরে এ তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি। আন্তঃশিক্ষাবোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, আগামীকাল শনিবার থেকে পুনঃনিরীক্ষণ আবেদন শুরু হবে, চলবে ৪ আগস্ট পর্যন্ত। তিনি জানান, প্রকাশিত ফলাফলে কেউ সংক্ষুব্ধ বা অসন্তষ্ট হলে তিনি চাইলে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে মাধ্যমে ঘরে বসেই তিনি এ আবেদন করতে পারবেন। পরে বোর্ড তার খাতা যাচাই-বাছাই করে দেখে আবেদন নিষ্পত্তি করবেন।এসএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষণ শুরু শনিবার পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়া বা কেউ ফল চ্যালেঞ্জ করতে চাইলে সে কার্যক্রম শুরু হবে শনিবার (২৯ জুলাই), চলবে আগামী ৪ আগস্ট পর্যন্ত। যেভাবে আবেদন করতে হবে শুধুমাত্র টেলিটক প্রিপেইড মোবাইল ফোন থেকে পুনঃনিরীক্ষণ আবেদন করা যাবে। আবেদন করতে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে RSC বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর রোল নম্বর বিষয় কোড লিখে Send করতে হবে 16222 নম্বরে। ফিরতি এসএমএ-এ আবেদন বাবদ কত টাকা কেটে নেওয়া হবে তা জানিয়ে একটি PIN দেওয়া হবে। এতে সম্মত থাকলে মেসেজ অপশনে গিয়ে RSC Yes PIN Contact Number (যেকোনও অপারেটর) লিখে Send করতে হবে 16222 নম্বরে।

ফল পুনঃনিরীক্ষণে ক্ষেত্রে একই এসএমএস-এর মাধ্যমে একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে। সে ক্ষেত্রে কমা (,) দিয়ে বিষয় কোড আলাদা লিখতে হবে। যেমন ঢাকা বোর্ডের একজন শিক্ষার্থী বাংলা ও ইংরেজি দুটি বিষয়ের জন্য টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখবে RSC Dha Roll Number <Space) 101, 102, 107, 108। ফল পুনঃনিরীক্ষণে প্রতিটি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা করে কেটে নেওয়া হবে। পুনঃনিরীক্ষণে খাতা মূল্যায়ন নয়, চারটি বিষয় দেখা হয় শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, পুনঃনিরীক্ষণ করলে একজন শিক্ষার্থীর খাতা পুনরায় মূল্যায়ন করা হয় না। পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন হওয়া উত্তরপত্রের চারটি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো, উত্তরপত্রের সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কি না এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কি না। এসব পরীক্ষা করেই পুনঃনিরীক্ষার ফল দেওয়া হয়। এ চারটি জায়গায় কোনো ভুল হলে তা সংশোধন করে নতুন করে ফল প্রকাশ করা হয়।